Tuesday 20 October 2015

ছাত্র-যুববান্ধব ও খ্রীষ্টভক্ত সুহৃদ আর্চবিশপ টি,এ,গাঙ্গুলী: পর্ব ২



--- ডাঃ নেভেল ডিঃ রোজারিও









(পূর্ব প্রকাশের পর)


 আর্চবিশপের সহানুভূতিশীলতায়  ছাত্রদের মরণোত্তর শ্রদ্ধা :

উপরিল্লিখিত  কারণে ছাত্রদের জন্যে প্রস্তবিত হোষ্টেল আর্চবিশপ গাঙ্গুলী আর শুরু করে যেতে পারেন নি কিন্তু  ছাত্রকল্যাণ সংঘ বরাবরই স্মরণ করেছে এবং সম্মান দেখিয়েছে তাদের পরম সুহৃদ, পৃষ্টপোষক ছাত্রকল্যাণ সংঘের জন্ম থেকে হিতাকাঙ্খী বন্ধুকে বিশেষত: অনলের বিভিন্ন বিশেষ সংখ্যায় সে অনুভূতির প্রকাশ পায় আর্চবিশপ মহোদয়ের মৃত্যুর পরে৭৭ সনে প্রকাশিত ৩য় বর্ষ বড়দিন সংখ্যা অনলে ন্তি শয়নে আর্চবিশপ গাঙ্গুলীর মরদেহের ছবির নীচে অনল সম্পাদকীয় পরিষদ খ্রীষ্টান ছাত্রকল্যাণ সংঘের পক্ষে সংখ্যাটি প্রয়াত আর্চবিশপের স্মরণে উৎসর্গ করে ক্যাপসান জুড়ে দেয়া হয়

‘‘ এবারেই তিনি প্রথম আমাদের মাঝে নেই
অথচ তিনি ছিলেন যাবৎ,
ছিলেন আমাদের একজন হিতাকাঙ্খী, বন্ধু
এবং প্রধান পৃষ্টপোষকরূপে সুদীর্ঘকাল
আমরা তাঁকে শ্রদ্ধার্হ চিত্তে স্বরণ করি
আজীবন করতেও চাই
কোন আনুষ্ঠানিকতার গদবাঁধা ছাঁচে নয়
বরং আমাদের কচি হাতের বিভিন্নতায়
আমরা তাঁর জীবিত আত্মায় বিশ্বাসী
এবং আশীর্বাদের প্রত্যাশী ’’
         
ছোট বড় সব ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে আর্চবিশপ টি,, গাঙ্গুলীর ন্তরিকতাপূর্ণ সহানুভূতিশীল সর্ম্পকের কারণেই তখনকার ছাত্র-ছাত্রীদের  মনে তিনি পেয়েছিলেন বিশেষ আসন আর তাইতো ছাত্রদের প্রাণের দাবী বাস্তবায়িত না হলেও শ্রদ্ধা জানাতে এক ফোটা কৃপণতাও প্রকাশ পায়নি তাদের মনে ছাত্র-ছাত্রীদের মনোভাব খানা রিলে রেসের বাটন স্তান্ততরের মত করেই পরবর্তীতে আসা নতুন প্রজন্মের ছাত্র-ছাত্রীদের মনে পেীছাতে পেরেছিল অগ্রজরা বছরের পর বছর ধরে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে বছরের পর বছর প্রতিটি প্রতিভার অন্বেষণের শেষদিনে আর্চবিশপ মহোদয়ের আত্মার কল্যাণে খ্রীষ্টযাগ কবরে শ্রদ্দাঞ্জলী জ্ঞাপন রীতিমত রেওয়াজ হয়ে দাড়িয়েছিল ১৯৯৪ সনে ছাত্রকল্যাণের রজত জয়ন্তী অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে আর্চবিশপ গাঙ্গুলীর কবরে জড়ো হয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলী জানাতে দেখেছিলাম এক বৃহৎ ছাত্র-জনতাকে যাদের অনেকের জস্ম হয়েছিল আর্চবিশপ মহোদয়ের মৃত্যুর পরে অনল এবং ছাত্রকল্যাণ সংঘের কর্মকর্তা সদস্য-সদস্যাদের মাঝে শ্রদ্ধের আর্চবিশপ গাঙ্গুলী খ্রীষ্টান ছাত্রাবাস সমস্যা এমন প্রভাব ফেলেছিল যে একই বড়দিন সংখ্যায় বড়দিনের শুভেচ্ছা জ্ঞাপনেও একই বিষয় চলে আসে

এবারের বড়দিন নববর্ষ
বাংলাদেশের খ্রীষ্টান ছাত্র-ছাত্রীদের
জীবনে নিয়ে আসুক
আমাদের পৃষ্টপোষক হিতাকাঙ্খী বন্ধু
আর্চবিশপ গাঙ্গুলীর স্বপ্ন ----
স্থায়ী হোষ্টেল বাস্তবায়নের
উজ্জ্বল সম্ভাবনা

তাঁর সে অসমাপ্ত কাজ
আমরা সমাপ্ত করবোই --
হোক আমাদের শুভদিনে
আপনার, আমার
সবার দৃপ্ত শপথ


প্রতিভার অন্বেষণ, ছাত্রকল্যাণ আর্চবিশপ গাঙ্গুলী :
 সামাজিক মূল্যবোধ গড়ে তোলার সামাজিক অবক্ষয় রোধের প্রাথমিক শর্ত সবাইকে সংস্কৃতিমনা করে তোলা সে সময়কার খ্রীষ্টানদের মধ্যে সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চা তেমন ছিল না একদিকে ছিল পর্যাপ্ত সুযোগের অভাব, অন্যদিকে নিজেদের মধ্যে অনুশীলন পরিশীলনের আগ্রহের অভাব এমনি এক অবস্থায় খ্রীষ্টান সমাজের বিভিন্ন  পর্যায়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের সুযোগ সৃষ্টিতে ১৯৭৫ সনে আয়োজন করা হয ১ম শিক্ষা সাংস্কৃতিক সপ্তাহ৭৫ এর সে প্রথম অনুষ্ঠানের শেষদিন পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভ্যাটিক্যানের রাষ্ট্রদুত মহামান্য আর্চবিশপ (পরবতীর্তে কার্ডিনাল) এডওয়ার্ড ক্যাসিডি বিশেষ অতিথি ছিলেন আর্চবিশপ টি..গাঙ্গুলী পুরষ্কার বিতরণী সভায় সংঘের সভাপতি নেভেল ডিঃ রোজারিও প্রতিযোগিতামূলক ধরনের কর্মসুচী মান্ডলিকগতভাবে সারা বাংলাদেশ জুড়ে গ্রহণ করার জন্যে আর্চবিশপ গাঙ্গুলীর নিকট অনুরোধ রাখেন বিশেষ অতিথি তাঁর ভাষণে বলেন,   ‘‘ এতদিন ইচেছ থাকলেও উপায় ছিল না যুব সম্প্রদায়ের সমস্যা তলিয়ে দেখার এবার থেকে একজন যাজক থাকবেন যুব সম্প্রদায়ের পরামর্শদাতা সাহায়্যকারী রূপে

পঁচাত্তুরে শুরু করা প্রতিভার অন্বেষণশত ঘাত-প্রতিঘাতের মুখেও টিকে থেকে ৪০ বছর পর ২০১৫ পালন করছে আটত্রিশতম প্রতিভার অন্বেষণ ঢাকা কেন্দ্রিক অনুষ্ঠান হলেও প্রথম বছর থেকেই বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অনেকেই প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে প্রায় প্রতিবছরই প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানটি নতুন প্রজন্মের প্রতিভা উন্মেষের ক্ষেত্রকে করেছে আরও প্রসারিত আর্চবিশপ গাঙ্গুলী বিশ্বাস করতেন যে সাধারণ মানুষের সক্ষমতা এবং মানবিক অর্জনগুলো সাংস্কৃতিক ভাবনায় যুক্ত করতে হবে আমাদের সম্প্রদায়ে প্রচলিত প্রাচীন বদ্ধমুল চিšতা-চেতনা, শিক্ষা, প্রবৃত্তি দিয়ে পরিবর্তনশীল বিশ্বকে বোঝা যে কোনোভাবেই সহজ কাজ নয় তা ঠিকই তিনি অনুভব করেছিলেন আর এটা মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন বলেই তাকে দেখেছি প্রতিভার অন্বেষণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন যুব সংগঠনগুলোকে বিভিন্ন কর্মকান্ডে উৎসাহিত করতে ছাত্র সম্প্রদায়কে তিনি শিক্ষার পাশাপাশি মুক্তমনের অধিকারী এবং সংস্কৃতিমনা  হতে উৎসাহিত করতেন সব সময়

সংস্কৃতি-মনা আর্চবিশপ গাঙ্গুলী  


সুহৃদ সংঘের জন্মের পর তাদের প্রথম নাটক মঞ্চায়নের জন্যে বেছে নেয়া কল্যাণ মিত্রেরকুয়াশা কান্নানাটকটি নাটকটি পরিচালনার  ভার দেয়া সুহৃদ সংঘের অন্যতম উপদেষ্টা মিঃ হেবল ডিঃ ক্রুজকে সহকারী পরিচালনায় ছিলেন সুহৃদ জর্জ ডিঃ রোজারিও এবং সংগীত পরিচালনায় ছিলেন সুহৃদ দীপক বোস সেন্ট গ্রেগরী হাই স্কুল কতৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে স্কুলেরই একটি ক্লাশরূমে শুরূ রিহ্যারসেল প্রতিদিন সন্ধ্যায় সামাজিকতায় বিরূপ ধারণা পরবর্তী প্রতিক্রিয়ার কারণে সে সময় মহিলা চরিত্রে অভিনয় করার জন্যে আজকালকার মত সৌখিন মহিলা অভিনেত্রী পাওয়া যেত না বললেই শুধু নয় বলতে হয় রীতিমত দু:প্রাপ্যও ছিল আবার পারিশ্রমিকের বিনিময়ে অভিনেত্রী আনার আর্থিক সঙ্গতি ছিল না সংঘের সুহৃদ সংঘের দুর্যোগে কালে সাহস করে সেদিন এগিয়ে এসেছিলেন সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার স্কুলের দুজন শিক্ষিকা মিস এগনেস এবং মিস পুষ্প গমেজ কিন্তু পাল-পুরোহিত সরাসরি জানিয়ে দিলেন মহিলা নিয়ে কোন নাটক করা যাবে না মহিলা চরিত্রে পুরূষকে মহিলার মেক আপ দিয়ে শাড়ী পড়িয়ে অভিনয় করাতে হবে ১৯৬৯ এর গোড়ার দিকে খোদ ঢাকা শহরে মহিলা চরিত্রে পুরূষকে মহিলা সাজিয়ে নাটক মঞ্চায়ণ ২০১৫ এসে অবিশ্বাস্য ঠেকলেও সেদিনকার মান্ডলিক সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলের সেটাই ছিল আসল চেহারা ------সেটাই ছিল বাস্তবতা সুহৃদ সংঘ নিছক একটা ক্লাব, সংঘ বা সমিতি বলতে যা বুঝায় আদতে তা ছিল না বরং ছিল একটি আন্দোলন আন্দোলন ছিল শেকড়ের অন্বেষণের পাশাপাশি খ্রীষ্টান সমাজে প্রচলিত প্রতিষ্ঠিত অন্যায় অবিচারের বিরূদ্ধে স্বোচ্চার প্রতিবাদী কন্ঠ এবং সমাজে বহমান বিপরীতমুখী স্রোতধারার বিরূদ্ধে অবস্থান নিয়ে তা পাল্টানোর একটি সমবেত সাহসী পদক্ষেপ তাই সুহৃদ বাহিনী এটাকে সহজভাবে মেনে না নিয়ে দ্বারস্থ হলো আর্চবিশপ গাঙ্গুলী মহোদয়ের নিকট আর্চবিশগ মহোদয় ধৈয্য সহকারে  ক্ষুব্দ এবং আবেগপ্রবণ যুবক দলের সব কথা শুনলেন এবং গ্রামের জন্যে প্রচলিত ব্যবস্থা শহরের জন্যে কোনমতেই প্রযোজ্য নয় বলে আমাদেরকে নাটকের মহড়া চালানোর পরামর্শ দিয়ে যথাস্থানে নির্দেশ পাঠিয়ে দিলেন সুচিন্তাবিদ, সংস্কৃতিবান সংস্কৃতিপ্রাণ, দুরদৃষ্টিসম্পন্ন জ্যের্তিময় মহাপুরূষের সেদিনের সে সিদ্ধান্ত মান্ডলিক সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে এক মাইলষ্টোন হিসেবে চিহ্নিত হবার দাবী রাখে।(চলবে)

Sunday 18 October 2015

সুহৃদ প্রামাণ্য চিত্র : ’অন্তিম শয়নে আর্চবিশপ টি,এ, গাঙ্গুলী’ (ভিডিও সহ)



                                 
                                     
মেরীল্যান্ডে আর্চবিশপ প্যাট্রিক ডি: রোজারিও’র নিকট  ’অন্তিম শয়নে আর্চবিশপ টি,এ, গাঙ্গুলী’  সুহৃদ প্রামাণ্য চিত্রটি হস্তান্তর করেন  সুহৃদ  সংঘের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ডা: নেভেল ডি: রোজারিও ও আর এক প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক এলবার্ট গমেজ।                            


















- ডা: নেভেল ডি: রোজারিও
             

আজ থেকে ৩৮ বছর আগে আকস্মিক হৃদ-ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান বাংলাদেশ খ্রীষ্টমন্ডলীর প্রাণপুরূষ আর্চবিশপ টি,এ, গাঙ্গুলী সিএসসি। প্রথম বাঙ্গালী আর্চবিশপ টি,এ, গাঙ্গুলী সিএসসিকে মৃর্ত্যুর ২৯ বছর পর পূণ্য পিতা পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট তাঁকে 'ঈশ্বরের সেবক' হিসেবে ঘোষণা করেন। প্রয়াত আর্চবিশপ টি,এ, গাঙ্গুলী জাতি, সম্প্রদায়  ও মন্ডলীর সবার প্রগতি ও মঙ্গল কামনায় জীবনভর সাধনা করে গেছেন । তাঁর সাধনার ফল্গুধারায় আমাদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মান্ডলিক জীবন আজ ফলে ফুলে বিকশিত। 

রমনা গির্জায় অনুষ্ঠিত তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় হিন্দু , মুসলমান, বেীদ্ধ, খ্রীষ্টান ধর্মনির্বিশেষে শোকে মুহ্যমান লাখো মানুষের নেমেছিল ঢল। ইতিহাসের পাতায় যে সব বিরল ব্যক্তিত্ব তাঁদের কর্মপ্রচেষ্টায় বাংলাদেশের খ্রীষ্টভক্ত এবং জনগণের কাছে অমর হয়ে আছেন যুগ থেকে যুগান্তরে--- প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে, আর্চবিশপ থিওটোনিয়াস অমল গাঙ্গুলী সিএসসি ছিলেন তাঁদের অন্যতম। ১৯৬৫ সনের পাক-ভারত যুদ্ধ শেষে কুখ্যাত মোনেম খানের প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় ময়মনসিংহের খ্রীষ্টান জনগোষ্ঠীকে ভারতে ঠেলে পাঠানোর প্রতিবাদ করার কারণে স্বল্প সময়ের নোটিশে আর্চবিশপ গ্রেণার সিএসসি কে পূর্ব পাকিস্তান থেকে বহিস্কার করার পরে এক রকম অপ্রস্তুত অবস্থায় ঢাকার তখনকার সহকারী বিশপ টি,এ,গাঙ্গুলী ১৯৬৭ সনের নভেম্বর ২৩,ঢাকা মজা-ধর্মপ্রদেশের(আর্চ-ডায়োসিসের) আর্চবিশপ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। 

সুহৃদ সংঘ নিছক একটা ক্লাব, সংঘ বা সমিতি বলতে যা বুঝায় আদতে তা ছিল না বরং এ ছিল একটি আন্দোলন। এ আন্দোলন ছিল শেকড়ের অন্বেষণের পাশাপাশি খ্রীষ্টান সমাজে প্রচলিত প্রতিষ্ঠিত অন্যায় অবিচারের বিরূদ্ধে স্বোচ্চার প্রতিবাদী কন্ঠ এবং সমাজে বহমান বিপরীতমুখী স্রোতধারার বিরূদ্ধে অবস্থান নিয়ে তা পাল্টানোর একটি সমবেত সাহসী পদক্ষেপ। আর এ পদক্ষেপের প্রাথমিক ধাপ হিসেবে সংঘ গ্রহণ করেছিল কিছু ব্যতিক্রমধর্মী সাংস্কৃতিক কর্মসূচী ---- এগুলোতে যখনই কোন বাধা আসতো তা উত্তরণে সব সময়ই ইতিবাচক ভূমিকা ছিল আর্চবিশপ গাঙ্গুলীর। আর্চবিশপ গাঙ্গুলী বিশ্বাস করতেন যে সাধারণ মানুষের সক্ষমতা এবং মানবিক অর্জন গুলো সাংস্কৃতিক ভাবনায় যুক্ত করতে হবে। আমাদের সম্প্রদায়ে প্রচলিত প্রাচীন বদ্ধমুল চিšতা-চেতনা, শিক্ষা, প্রবৃত্তি দিয়ে এ পরিবর্তনশীল বিশ্বকে বোঝা যে কোনোভাবেই সহজ কাজ নয়, তা ঠিকই তিনি অনুভব করেছিলেন। আর এটা মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন বলেই সবাইকে সংস্কৃতিমনা  হতে উৎসাহিত করতেন সব সময়। তাইতো সুহৃদ বাহিনী সেদিন প্রিয়জন হারানোর বেদনা নিয়ে সদলবলে উপস্থিত হ’ল কাকরাইলস্থ আর্চবিশপ হাউজ প্রাঙ্গঁণে। আমি তখন ঢাকা মেডিকেলে ইর্ন্টানী করছি। খবর পেয়ে ছুটে গেলাম আর্চবিশপ হাউজে। ফাঃ বেঞ্জামিন কস্তা, ফাঃ জ্যোতি গমেজ সহ অনেকের  সাথে আলাপ  শেষে তাঁরা মৃতদেহ সংরক্ষণের ব্যবন্থা করতে বললেন। তখনকার দিনে আজকের মত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মৃতদেহ সংরক্ষণের কোন ব্যবন্থা ছিল না। তখনকার দিনের ব্যবস্থামত ঢাকা  মেডিকেল  কলেজের  ফরেনসিক মেডিসিন (পোষ্ট মোর্টেম) বিভাগের রবি ডোমকে এনে রগের ভেতর সিরিঞ্চ দিয়ে সুঠামদেহী মাঝারি আকারের হালকা পাতলা গড়নের আর্চবিশপ গাঙ্গুলীর মৃতদেহে ফরমালিন প্রবেশ করানো হলো। আর্চবিশপ গাঙ্গুলীর মৃতদেহ প্রার্থনারত ধর্মব্রতধারী-ধারিনী সিষ্টার, ফাদার. ব্রাদার, সেমিনারীয়ান ও সাধারণ খ্রীষ্টভক্ত পরিবেষ্ঠিত অবস্থায় রমনা ক্যাথিড্রাল গীর্জার ভেতরে রাখা ছিল। সুহৃদ গানের দল অন্যান্যের সাথে প্রার্থনার মাঝে মাঝে ধর্মীয় গান পরিবেশন করলো।

         মূল অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় ও সহার্পিত খ্রীষ্টযাগে বাংলাদেশের তিন বিশপসহ অংশ নেন শতাধিক পুরোহিত। সুহৃদ গানের দল বিশিষ্ট সংগীত পরিচালক সুহৃদ দীপক বোসের নেতৃত্বে অন্যান্যদের সাথে খ্রীষ্টযাগের গান পরিবেশন করে। বাংলাদেশে তখন বাংলাদেশ টেলিভিশন ছাড়া আর কোন সরকারী বা বেসরকারী টেলিভিশন ছিল না। ছিল না আজকের মত কোন ক্যাবল টিভি। সরকারী টেলিভিশন চ্যানেল বাংলাদেশ টেলিভিশনেরও কোন ভ্রাম্যমান ক্যামেরা ক্রু ছিল না, তাদেরকে সংবাদ চিত্রের জন্যে নির্ভর করতে হ’ত সরকারী প্রেস এন্ড পাবিলিকেশনের ১৬ মিঃমিঃ ক্যামেরায় ধারণকৃত ফিল্মের উপর। ব্যক্তি মালিকাধীন ভিডিও ক্যামেরা কারো কাছে ছিল না , পাওয়া যেত না আজকের মত অর্থের বিনিময়ে পেশাধারী কোন ভিডিওগ্রাফার। বাংলাদেশ টেলিভিশনের সংবাদে পরিবেশনার জন্যে সেদিনের সে  অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার চিত্রধারণের জন্যে সরকারী প্রেস এন্ড পাবিলিকেশনের একজন ক্যামেরাম্যান ১৬ মিঃমিঃ ক্যামেরা নিয়ে আসেন। ক্যামেরাম্যান যখন চিত্র ধারণ করছিলেন তখনই সর্বসুহৃদ জর্জ ডিঃ রোজারিও,  হিউবার্ট অরূণ রোজারিও, পাস্কেল গমেজ, ক্লির্ফোড চন্দন গমেজ,  সুভাষ সেলেষ্টিন রোজারিও,মাইকেল বকুল গমেজ,পিয়ুস দিলীপ কস্তা,  ডঃ ডনাল্ড গমেজ ও বর্তমান লেখক সুহৃদ ডাঃ নেভেল ডিঃ রোজারিও তড়িৎ সিদ্ধাস্ত নেয় অসুষ্ঠানের উপরে একটি প্রামাণ্য চিত্র নির্মাণের। সিদ্ধাšতানুযায়ী এক ফাকে ক্যামেরাম্যানকে একটু বেশী করে অনুষ্ঠানের চিত্রধারণের প্রস্তাব দেয়া হয়। ক্যামেরাম্যান ৩ মিনিটের আন্দাজের চিত্রধারণের জন্যে বরাদ্দকৃত ১৬ মিঃ মিঃ ফিল্মের সীমাবদ্ধকার কথা জানালে অতিরিক্ত ফিল্মের ব্যয়ভার সুহৃদ সংঘ বহন করবে বলে জানানো হলে উনি ১০ মিনিটের আন্দাজের চিত্রধারণে রাজী হ’ন। আলোচনায় স্থির করা হয় যে উনি সন্ধ্যার মধ্যে ধারণকৃত ফিল্মের অংশ এডিট করে সূচনা টেল্পের লিখা  ফিল্মটি আমাদেরকে হস্তান্তর করবেন-- বিনিময়ে ফিল্মসহ সর্বসাকুল্যের ব্যয় বাবদ তাকে দে’য়া হবে ৫০০/= টাকা। সর্বসুহৃদ জর্জ ডিঃ রোজারিও ও পাস্কেল গমেজের তত্ত্বাবধানে ক্যামেরাম্যান পুরো অনুষ্ঠানের গুরূত্বপূর্ণ অংশের চিত্রধারণ করেন এবং তাঁরাই সন্ধায় কাকরাইলস্থ নির্দিষ্ট স্থান থেকে তা গ্রহণ করেন। এ ভাবেই নির্মিত হ’ল  একটি সুহৃদ প্রযোজনা হিসেবে আর্চবিশপ গাঙ্গুলীর উপরে নির্মিত একমাত্র প্রামাণ্য চিত্র ”অন্তিম শয়নে আর্চবিশপ টি,এ, গাঙ্গুলী ”। ভিডিওটি দেখতে ক্লিক করুন: https://www.youtube.com/watch?v=1JigkBSoIs0

নির্মাণের পর থেকেই সুহৃদ সংঘ যখনই যেখানেই সুযোগ পেয়েছে ভ্রাম্যমান প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে লক্ষীবাজার, রমনা ও তেজগাঁও গীর্জায়  বিভিন্ন জনসমাবেশে ১৬ মি:মি: প্রজেক্টরের ব্যবস্থা করে। নিজেদের এবং খ্রীষ্টান ছাত্রকল্যাণ সংঘের বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও প্রামাণ্য চিত্রটি প্রদর্শিত হয়েছে বেশ কয়েক বছর। নির্মাণের পর থেকেই যথাযথ সংরক্ষণের জন্যে সুহৃদ সংঘ বার বার যোগাযোগ করেছিল খ্রীষ্টান যোগাযোগ কেন্দ্র  ’বাণীদীপ্তি’ র সাথে --- কোন প্রকার শর্তবিহীনভাবে প্রামাণ্য চিত্রটি হস্তান্তরের জন্যে। ’বাণীদীপ্তি’ কতৃপক্ষ্যের  এ ব্যাপারে কোন আগ্রহ না দেখানোতে এ হস্তান্তর  করা আর হয়ে উঠেনি। ’বাণীদীপ্তি’র নিজস্ব কোন প্রযোজনা না হওয়ার কারণেই সম্ভবতঃ তাদের এ অনাগ্রহতা ছিল। সর্বশেষ প্রদর্শনী হয়েছিল রমনায়, যেখানে প্রজেক্টরটি পুড়ে যায়। ১৬ মি:মি: প্রজেক্টরের দুষ্প্রাপ্যতার কারণে এবং অযত্ম-অবহেলায় হারিয়ে যায় আর্চবিশপ গাঙ্গুলীর উপরে নির্মিত একমাত্র   প্রামাণ্য চিত্রটি। এটির অভাব আরও বেশী করে অনুভূত হয়েছিল গাঙ্গুলীর ২৯তম মৃত্যুবার্ষিকীতে, আর্চবিশপ গাঙ্গুলীকে ধন্যশ্রেণী ভুক্ত করে  ’ঈশ্বরের সেবক’ হিসেবে ঘোষণা  করার  অনুষ্ঠানে  প্রদর্শিত হওয়া,  আর্চবিশপ গাঙ্গুলীকে নিয়ে তৈরী করা শব্দ বিঘ্ন স্থির চিত্রের স্লাইড শোর পরিবেশনাটা দেখে।



সবশেষে অনেক অনেক শ্রদ্ধা জানাই প্রিয় আর্চবিশপকে । সুপ্রিয় পাঠকবৃন্দ, সুখের বিষয় ২০০৮ সালে বাড়ী বদলের সময় সুহৃদ সংঘের এক প্রাক্তন সভাপতির পুরোনো কাগজের স্তুপের মাঝের পরিত্যক্ত ব্রিফ কেস থেকে উদ্ধার হলো হারিয়ে যাওয়া প্রামান্য চিত্রটি। প্রযুক্তির উন্নতির কারণে ততদিনে ১৬ মি:মি: প্রজেক্টর স্থান নিয়েছে যাদুঘরে। প্রামান্য চিত্রটি প্রদর্শনের সমস্যায় ঢাকা শহর চষে বেড়ালাম ১৬ মি:মি: থেকে সিডি তে রুপান্তরের সন্ধানে। অবশেষে AVICOM এর সন্ধান পেয়ে এটাকে DVD-CD  করে বিদেশে পাড়ি জমালাম। ২০১২ সনে দেশে গিয়ে এটাতে Title Design and Music সংযোগ করলাম। আর্চবিশপ প্যাট্রিক ডি রোজারিও সিএসসি’র মেরীল্যান্ড সফরকালে তাঁর নিকটএকখানা CD হস্তান্তর করা হয়। ২০১৫ তে https://web.facebook.com/TAGanguly ও আমার FaceBook এ postকরা হয়। 


 ডা: নেভেল ডি: রোজারিও: সুহৃদ সংঘের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও প্রাক্তন সভাপতি,
 এবং বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের জাতীয় পরিষদের প্রাক্তন মহাসচিব




Thursday 15 October 2015

ছাত্র-যুববান্ধব ও খ্রীষ্টভক্ত সুহৃদ আর্চবিশপ টি,এ,গাঙ্গুলী: পর্ব ১

            

            

-ডাঃ নেভেল ডিঃ রোজারিও


পূণ্য পিতা পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট, প্রথম বাঙ্গালী আর্চবিশপ টি,, গাঙ্গুলী সিএসসিকে  ধন্যশ্রেণীভুক্ত হবার প্রাথমিক ধাপ হিসেবে 'ঈশ্বরের সেবক' হিসেবে ঘোষণা করেছেন ইতিহাসে কোন বাঙ্গালীকে ধন্যশ্রেণীভুক্তকরণ এটাই প্রথম আজ থেকে ৩৮ বছর আগে আকস্মিক হৃদ-ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা  যান  বাংলাদেশ মন্ডলীর প্রাণপুরূষ আর্চবিশপ টি,, গাঙ্গুলী সিএসসি তাঁর সেদিনের আকস্মিক তিরোধানে হতবিহ্বল হয়ে পড়েছিল বাংলাদেশের তাবৎ মন্ডলী প্রিয় ব্যক্তিত্ত্বের ইহলোক থেকে আকস্মিক বিদায় কাথলিক মন্ডলীর আমাদের সবাইকে সেদিন মান্ডলিক অভিভাবক প্রগতি শূণ্যতায়  ভারাক্রাš  করে ফেলেছিল কেননা জাতি, সম্প্রদায়  ন্ডলীর সবার প্রগতি মঙ্গল কামনায় জীবনভর সাধনা করেছেন প্রয়াত আর্চবিশপ টি,, গাঙ্গুলী সিএসসি   তাঁর সাধনার ফল্গুধারায় আমাদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক মান্ডলিক জীবন আজ ফলে ফুলে বিকশিত ব্যক্তিগত ভাবে তো বটেই সামাজিক মান্ডলিক বেশ কিছু  কর্মকান্ডে, খ্রীষ্টভক্তদের যে কোন প্রয়োজনে তাঁর সহযোগিতা , সহমর্মীতা  চিরস্বরণীয় হয়ে থাকবে যুগ থেকে যুগান্তরে--- প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে

রমণা গির্জায় সে সময়কায় অনুষ্ঠিত তাঁর ন্ত্যষ্টিক্রিয়ায় হিন্দু , মুসলমান, বেীদ্ধ, খ্রীষ্টান ধর্মনির্বিশেষে শোকে মুহ্যমান লাখো মানুষের নেমেছিল ঢল  ঠিক তেমনি ভাবে তাঁর ২৯তম মৃত্যু বার্ষিকীতে রমণা ক্যাড্রিালে যখন আয়োজন করা তাঁকে 'ঈশ্বরের সেবক' ঘোষণার, তখন কোন প্রকার আমন্ত্রণ ছাড়াই ঝড় বৃষ্টিকে উপেক্ষা  করে সেদিন নেমেছিল উপ্চে পড়া মানুষের ঢল এটাই স্বাভাবিক কেননা তিনি যে তাঁর অগণিত ভক্ত শুভানুধ্যায়ীর ভালবাসায় সিক্ত হয়ে আছেন তাঁর তিরোধানের পর থেকেই লাখো লাখো ভক্তের হৃদয়ে তিনি বেঁচে আছেন চিরকাল, আর তাদের ভালবাসায় সিক্ত হবেন আরও অনšতকাল ধরে

ইতিহাসের পাতায় যে সব বিরল ব্যক্তিত্ব তাঁদের কর্মপ্রচেষ্টায় বাংলাদেশের খ্রীষ্টভক্ত এবং জনগণের কাছে অমর হয়ে আছেন আর্চবিশপ থিওটোনিয়াস অমল গাঙ্গুলী সিএসসি তাঁদের অন্যতম আমার সেীভাগ্য হয়েছিল স্কুলের ছাত্র থাকাকালীন সময় থেকে মহান ব্যক্তিত্বের সান্নিধ্যে আসার আরও সুযোগ হয়েছিল কলেজ জীবনে সুহৃদ সংঘ, খ্রীষ্টান ছাত্রকল্যাণ সংঘ সহ বিভিন্ন যুব-ছাত্র আন্দোলনে জড়িত থাকাকালে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ইস্যুতে তাঁর কাছে যাবার তাঁকে চিনেছি ছাত্রজীবনে,---স্বাধীকার আন্দোলনের উনসত্তুরের উত্তাল সে দিনগুলোতে,---- মহান মুক্তিযুদ্ধের প্র্স্তুুতি পর্বে-- মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে, ---- মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বিধ্ব¯ বাংলাদেশ পুর্ণগঠনে ----- বিশ শতকের মধ্য ষাট থেকে সত্তর শতকের শেষাংশ পর্যন্ত ছাত্র  যুবক অবস্থায় অনেকের মতোই আমিও ছিলাম তাঁর সাথে অচ্ছেদ্য বন্ধনে আমার সে সব পুরোনো স্মৃতিকে সম্বল করে আমি আজকের শুভক্ষণে আমার ছোট্ট ক্যানভাসে চিত্রিত করার চেষ্টা করবো ছাত্র-যুবসহ সাধারণ খ্রীষ্টভদের আর্চবিশপ গাঙ্গুলীকে আর্চবিশপ মহোদয়ের জাতীয়, মান্ডলিক ব্যক্তিগত স্মৃতিগুলো আমার কাছে একাকার হয়ে গেছে বলেই  ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ রোমন্থনের জন্যে পাঠকের কাছে  ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি শুরূতেই

            ষাটের দশকের শেষের দিকে তৎকালীন পূর্ব -পাকিস্তানের আপামর জনসাধারণ যখন বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদে উদ্ধুদ্ধ হয়ে স্বাধিকার অর্জনের  আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তখন তার প্রতিফলনও পড়ে ঢাকার তৎকালীন ক্ষুদ্র খ্রীষ্টান যুব ছাত্রদের মাঝে খ্রীষ্টান সমাজকে এদেশের মাটিতে প্রোথিত করে এদেশেরই বৃহত্তর জনগণের সাথে সম্পূক্ত করার সৎ সাহস নিয়ে এগিয়ে আসে তখনকার খ্রীষ্টান যুব ছাত্র সমাজ সুহৃদ সংঘ, ত্রিবেণী  ছাত্রকল্যাণ সংঘখ্রীষ্টান ছাত্রকল্যাণ সংঘ, বাংলাদেশ  সহ  দেশের
বিভিন্ন স্থানে  গড়ে উঠতে থাকে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদে উদ্ধুদ্ধ খ্রীষ্টান যুব ছাত্র সংগঠন সমূহ

খ্রীষ্টান যুব সম্প্রদায় এবং ছাত্র-ছাত্রীরা অনুভব করে যে, নিজেরা সংঘবদ্ধ হয়ে সমাজকল্যাণ , সমাজসেবা সমাজ-সংস্কারমূলক কাজে এগিয়ে আসার জন্যে একটা খ্রীষ্টান যুব সংগঠন থাকা আবশ্যক, যেখানে খ্রীষ্টিয় আদর্শ ভ্রাতৃত্ববোধের প্রতিফলনের পাশাপাশি গড়ে তোলা যাবে জাতীয় চেতনাবোধ সামাজিক অন্যায়- অবিচার রোধের পাশাপাশি রাজনৈতিক রাষ্ট্রীয়  অধিকার আদায়ের দাবীতে খ্রীষ্টান ছাত্র সমাজ হতে পারবে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদী ১৯৬৯ সনের লক্ষীবাজারে গড়ে উঠে ঢাকার খ্রীষ্টান যুব প্রতিষ্ঠান সুহৃদ সংঘ ১৯শে এপ্রিল ১৯৭০ সালে আহুত সাধারণ সভায় প্রস্তাবিত শাসনতন্ত্র অনুমোদনের মাধ্যমে জম্ম নেয় আজকের খ্রীষ্টান ছাত্রকল্যাণ সংঘ,বাংলাদেশ ুমাসব্যাপী এড্-হক কমিটির সব সভা এবং পরবর্তিতে গঠিত কার্যকরী পরিয়দের সব সভা রমনা আর্চবিশপ হাউজের পার্লারে অনুষ্ঠানের শুধু অনুমতি নয়, বরং প্রতিটি সভায় আমরা আপ্যায়িত বার যেন তাঁর একটি অলিখিত নির্দেশও ছিল  ষাটের দশকের শেষ ভাগে এবং সত্তরের  প্রথম  ভাগে গড়ে ওঠা সব যুব ছাত্র সংগঠন গড়ে ওঠার ব্যাপারে তখনকার আর্চবিশপ টি,, গাঙ্গুলীর মনোভাব এবং সাহায্য সহযোগিতা ছিল আশাতীত স্মরণীয়

 মানবিক গুণের অধিকারী  ছাত্রসুহৃদ আর্চবিশপ 

প্রকৃত ধর্মভিত্তিক নৈতিকতার সঙ্গে আর্চবিশপ গাঙ্গুলীর ছিল নিবিঢ় সর্ম্পক তাঁর বাইরের পোষাকী আবরণটি ধর্মীয় লেবাসে আবৃত হলেও ভেতরটা ছিল প্রগতিশীলতার কন্ঠস্বরে ভরা, মুক্তচিšতা বিজ্ঞানভিত্তিক নৈতিকতাবোধের দ্বারা চালিত আর্থ-সামাজিক   সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলের পরিবর্তনের ক্ষেত্র রচনার ঝান্ডা সমুন্নত রাখার  দিক-নির্দেশনাময় 

সুঠামদেহী মাঝারি আকারের হালকা পাতলা গড়নের মানুষ ছিলেন আর্চবিশপ গাঙ্গুলী কিন্তু তাঁর হাসিটি ছিল বিরাট কোনদিন কাউকে ধমক দিয়ে কথা বলতে শোনেনি কেহ তাঁকে অথচ তাঁর ব্যক্তিত্ব ছিল অত্যন্ত সবল স্বল্পভাষী কিন্তু বহূভাষাবিদ , সুলেখক, সুগায়ক   সুবক্তা  আর্চবিশপ গাঙ্গুলী সৎপথে থেকে একটা আর্দশ এবং লক্ষ্যের ভিত্তিতে পথ চলা পছন্দ করতেন বাঙ্গালী যাজকদের মধ্যে প্রথম পিএইচডি ডিগ্রীধারী বিনয়ী আর্চবিশপ গাঙ্গুলী ছিলেন ছাত্র-ছাত্রীদের অতি প্রিয় আজীবন ছাত্র-ছাত্রীদের কল্যাণ কামনায় উদ্গ্রীব ছিলেন আর্চবিশপ গাঙ্গুলী তিনি নটরডেম কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবেও দক্ষতা, সুনাম সম্মান অর্জন করেন আর্চবিশপ গাঙ্গুলী  একজন বিজ্ঞ , দূরদর্শী চিšতাবিদ নিরলস কর্মী ছিলেন দূরদৃষ্টি ছিল বলেই তিনি একজন আর্দশ, মানবিক মূল্যবোধের মহান ব্যক্তিত্ব হিসেবে আজও চিহ্নিত হয়ে আছেন তাঁর কাছে যারাই যেত উনি তাদের কথা বি¯তারিত শুনতেন, আলোচনা করতেন, সুখ-সুবিধা দেখতেন, অসুবিধাগুলো অনুধাবন করার চেষ্টা করতেন --- সর্বোপরি যেখানে যা প্রয়োজন সেখানে সে পরামর্শ নির্দেশ দিতেন  আর্চবিশপ গাঙ্গুলীর ব্যক্তিত্বের মধ্যে এমন একটি বিশেষত্ব ছিল যে তাঁর সাহচর্যে আসা ছাত্র-ছাত্রী, সহকর্মী, অনুরাগী,এমনকি বিরাগী নির্বিশেষে সবাইকে চমৎকিত করতে পারতেন আর্চবিশপ গাঙ্গুলীর মধ্যে সব সময় একটি প্রচন্ড ইতিবাচক মোহনীয় আকর্ষণ ছিল, যা তাঁকে মহীয়ান করে রেখেছে মৃত্যুর এত বছর পরেও তিনি আজ এত বছর পরেও অমর হয়ে আছেন  তাঁর কর্ম কীর্তির মধ্য দিয়ে সর্বগুণে গুণবান আর্চবিশপ গাঙ্গুলীর মানব সেবার আর্দশ যুগ যুগ ধরে অনুপ্রেরণা দিয়ে যাবে অনাগত দিনের মানুষকে

 খ্রীষ্টান ছাত্রাবাস ছাত্রকল্যাণ সংঘের আন্দোলন আর্চবিশপ 

নটরডেম কলেজের খ্রীষ্টান ছাত্রাবাসে ঢাকা শহরের বাইরের ছাত্ররা থাকতো ১৯৭৩ সনে  ছাত্রাবাস হঠাৎ করে বন্ধ করে সবাইকে অমানবিকভাবে রা¯তায় বের করে দেয়ার প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় সম¯ খ্রীষ্টান সমাজে এবং খ্রীষ্টান ছাত্রকল্যাণ সংঘে চাপা বিক্ষোভে প্রতিবাদে ফেটে পড়লো ছাত্রকল্যাণ সংঘ  ১৯৭৫ সনে ছাত্রকল্যাণ প্রকাশ করে তার মাসিক মুখপত্র অনল অনলের জন্মলগ্ন থেকেই প্রতিটি সংখ্যায় প্রাধান্য পেতে থাকে খ্রীষ্টান ছাত্র-ছাত্রীদের প্রাণের দাবী হোস্টেল সমস্যা৭৫-এর এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ত্রিবেণী ছাত্র কল্যাণ সংঘের বার্ষিক সাধারণ সভায় খ্রীষ্টান ছাত্রকল্যাণের তৎকালীন সভাপতি নেভেল ডিঃ রোজারিও এর ’’এবার আর এককভাবে নয় ----- আসুন সমবেতভাবে হোষ্টেল সমস্যার সমাধান করি’’ আহ্বানে ১৩ই এপ্রিল ছাত্রকল্যাণ সংঘের সভাপতি নেভেল ডিঃ রোজারিওকে আহ্বায়ক করে বিভিন্ন সংঘ সমিতির সমন্বয়ে গঠন করা হয়সম্মিলিত (সর্বদলীয়ভাবে) হোষ্টেল বাস্তবায়ন কমিটি(অনল ১ম বর্ষ ঃঃ ২য় সংখ্যা)

সর্বদলীয় হোষ্টেল বাস্তবায়ন কমিটির বিভিন্ন পদক্ষেপের পাশাপাশি অনলের তৃতীয় সংখ্যায় হোষ্টেল ইস্যুটাকে সামনে রেখে সুবল এল, আর আঁকলো কার্টুন ---- গাধার পিঠে লম্বা নাকওয়ালা মানুষের নাগালের বাইরে নাকের ডগায় বাঁধা মূলো ভাবখানা এই যে, নাগালবিহীন মূলোরূপী খ্রীষ্টান ছাত্রাবাস এর প্রত্যাশায় গাধারুপী ছাত্র-ছাত্রী ধাবমান থাকবে অনাদিকাল পর্যš হয়তো দারুন কটাক্ষ ছিলো সে কার্টুনে কিন্তু সে সময়কার ছাত্র-ছাত্রীদের মনের কথাই প্রতিফলিত হয়েছিল সে সংখ্যার সে অনলে কটাক্ষ ছিলো প্রচন্ড--- তাই সবাইকে মহল বিশেষের কাছ থেকে যথেষ্ট তিরস্কার ধমক সহ্য করতে হয়েছিল অথচ সে কার্টুনটি নিয়ে সবচেয়ে বেশী যার প্রতিক্রিয়া জানানোর কথা, সে ধর্মাধ্যক্ষ আর্চবিশপ গাঙ্গুলীর ছিল না কোন ক্ষোভ, প্রকাশ পেল না কোন আক্রোশ বরং ক্ষমাশীল প্রভুর মত ছাত্র-ছাত্রীদের মঙ্গল কামনায় একই বছর মোহাম্মদপুরে আর্চ-ডায়োসিসের জমি ছাত্রদের হোষ্টেলের জন্যে দান করে গেলেন পর্যায়ক্রমে ঢাকায় ছাত্রী হোষ্টেল নির্মাণের চিন্তাও করেছিলেন তিনি

হোষ্টেল কমিটি, সর্বদলীয় হোষ্টেল বা¯তবায়ন কমিটি সাধারণ খ্রীষ্টভক্তদের দাবী এবং ছাত্রদের কল্যাণের কথা চিন্তা করে৭৫ সনের ১ম শিক্ষা সাংস্কৃতিক সপ্তাহ৭৫ (প্রতিভার অন্বেষণ) অনুষ্ঠানের শেষদিন পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন পন্ডিত শ্রদ্ধের আর্চবিশপ গাঙ্গুলী ঘোষণা দেন, ‘‘ মোহাম্মদপুরে যে ডায়োসিসের সম্পত্তি রয়েছে সেখানে ছেলেদের জন্য হোষ্টেল করে দেয়া হবে প্রভু আর্চবিশপ তাঁর ভাষণে ছেলেদের জমি দেওয়ার কথা বলেন (প্রতিবেশী রিপোর্ট , ২৬ শে অক্টোবর, ১৯৭৫)


ঘোষণার পরেও কাজে বিদেশী দাতা না পাওয়াতে আর্চবিশপ গাঙ্গুলী তাঁর জীবদ্দশায় হোষ্টেলের নির্মাণ কাজে এগুতে পারেননি ছাত্রদের হোষ্টেলের জন্যে তিনি অনলস অব্যাহত ভাবে বিভিন্ন দাতাদের সাথে যোগাযোগ করতে থাকেন পাশাপাশি ছাত্রদের আবাসন  সমস্যার জন্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন শিক্ষক ডঃ বেনেডিক্ট গমেজ, আলেকজান্ডার রোজারিও, নিকোলাস গমেজ প্রমুখদের নিয়ে গঠিত হোষ্টেল কমিটি মারফত ভাড়া করা হোষ্টেলে আর্থিকসহ সার্বিক সহযোগিতা দেন আর্চবিশপ মহোদয়ের আন্তরিক চেষ্টা স্বত্ত্বেও কোন বিদেশী অনুদান না পাওয়াতে সর্বদলীয় হোষ্টেল বান্তবায়ন কমিটি স্থানীয়ভাবে অর্থ সংগ্রহ করে হোষ্টেল নির্মাণের পরিকল্পনা আর্চবিশপ মহোদয়ের নিকট উপস্থাপন করে পরিকল্পনায় বছরের একটি বিশেষ রোববারকে ছাত্র দিবস হিসেবে ঘোষণা দিয়ে বাংলাদেশের সমস্ত গীর্জায় সংগৃহীত রবিবাসরীয় দানের সঙ্গে বিশেষ দান সংগ্রহের পাশাপাশি বিভিন্ন খ্রীষ্টিয় প্রতিষ্ঠান, বিত্তবান লোকদের কাছ থেকে অনুদান সংগ্রহ করার প্রস্তা করা হয় আর্চবিশপ মহোদয় তখনকার ডায়োসিসের বিশপদের সভায় তা আলোচনার আশ্বাস দেন পরবর্তীতে বিশপ সম্মেলনে ঢাকার বাইরের এক ডায়োসিসের বিশপের আপত্তি অনাগ্রহের কারণে তা আর হয়ে উঠেনি (চলবে)