Friday 2 October 2015

নটর ডেম কলেজের প্রথম বাংলাদেশি অধ্যক্ষ অমল গাঙ্গুলী




ভালো কলেজ হিসেবে ঢাকার নটর ডেম কলেজের সুনাম আছে। এই কলেজ বাংলাদেশে স্থাপিত হয় ১৯৫৫ সালে। বর্তমান নটর ডেম কলেজ প্রথমে সেন্ট গ্রেগরিজ কলেজ নামে লক্ষ্মীবাজারে কার্যক্রম শুরু করে। পরবর্তীতে মতিঝিলে নটর ডেম কলেজ নামে এই প্রতিষ্ঠানটি অদ্যাবধি শিক্ষা বিস্তার করে যাচ্ছে।


শুরুতে বিদেশি মিশনারীরা এ কলেজ পরিচালনা করতেন। ‘পবিত্র ক্রুশ সংঘ’ নামে একটি খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের পুরোহিত সংঘ বিভিন্ন দেশে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করে থাকে। তাদের মাধ্যমেই এদেশে নটর ডেম কলেজ স্থাপিত হয়। ঢাকার নটর ডেম কলেজের প্রথম বাংলাদেশি অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ফাদার থিওটোনিয়াস অমল গাঙ্গুলী। সবার কাছে তিনি টি.এ. গাঙ্গুলী নামে পরিচিত ছিলেন। পরবর্তী সময়ে তিনি বাংলাদেশের খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা ‘আর্চ বিশপ’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। দেশের একজন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী, জীবনগঠনকারী শিক্ষাবিদ ও সমাজ-সেবক তার সুনাম ছিল। তিনি ছিলেন অত্যন্ত বিনম্র, উদার, কঠোর পরিশ্রমী ও ধৈর্যশীল। তার জীবন ছিল ক্ষণস্থায়ি। তবুও বহু মানুষের হৃদয় তিনি স্পর্শ করেছিলেন। কলেজে তিনি লজিক পড়াতেন। লজিক শাস্ত্রে ছিল তার অগাধ পান্ডিত্য।

১৯৫৮ সালে তাকে নটর ডেম কলেজের অস্থায়ী ভাইস-প্রিন্সিপাল নিযুক্ত করা হয় এবং একই সঙ্গে অস্থায়ী অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপিরিয়রের দায়িত্বও দেওয়া হয়। সেই বছরই তাকে প্রধান নিয়ম শৃঙ্খলা রক্ষাকারীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরের বছর তিনি ভাইস-প্রিন্সিপাল হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর ১৯৬০ সালে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে তিনি নটর ডেম কলেজের অধ্যক্ষ পদে উন্নিত হন। শিক্ষা, বুদ্ধিমত্তা ও দূরদর্শিতার গুণে তিনি রচনা করেন নতুন এই ইতিহাস।

১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯২০ সালে ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন টি. এ. গাঙ্গুলী। ১৯৪০ সালে বান্দুরা হলি ক্রশ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন (বর্তমানে এসএসসি) পাস করেন। পরে ভারতে লেখাপড়া শেষে ১৯৪৭ সালে তিনি আমেরিকার নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করতে যান। সেখানে প্রথমে দর্শন শাস্ত্রের ওপর বি. এ. ডিগ্রি এবং এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৫১ সালে দর্শন শাস্ত্রের ওপর তিনি ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ভারত উপমহাদেশের একজন আধ্যাত্মিক সাধকের জীবন ও সাধনা নিয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

দেশের উন্নয়ন চিন্তা তাকে সূদুর আমেরিকা থেকে দেশে ফিরিয়ে আনে। দেশ স্বাধীন হবার পর টি.এ. গাঙ্গুলী খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে দেখা করতে যান। যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশ পুনর্গঠনে সেসময় তিনি বঙ্গবন্ধুর হাতে তুলে দেন একটি ধর্মীয় সোনার ক্রশ, সোনার চেইন এবং ২০ লক্ষ টাকা। ১৯৭৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর মাত্র ৫৭ বছর বয়সে তিনি চলে যান না ফেরার দেশে।
জেমস আনজুস

No comments:

Post a Comment