Tuesday 20 October 2015

ছাত্র-যুববান্ধব ও খ্রীষ্টভক্ত সুহৃদ আর্চবিশপ টি,এ,গাঙ্গুলী: পর্ব ২



--- ডাঃ নেভেল ডিঃ রোজারিও









(পূর্ব প্রকাশের পর)


 আর্চবিশপের সহানুভূতিশীলতায়  ছাত্রদের মরণোত্তর শ্রদ্ধা :

উপরিল্লিখিত  কারণে ছাত্রদের জন্যে প্রস্তবিত হোষ্টেল আর্চবিশপ গাঙ্গুলী আর শুরু করে যেতে পারেন নি কিন্তু  ছাত্রকল্যাণ সংঘ বরাবরই স্মরণ করেছে এবং সম্মান দেখিয়েছে তাদের পরম সুহৃদ, পৃষ্টপোষক ছাত্রকল্যাণ সংঘের জন্ম থেকে হিতাকাঙ্খী বন্ধুকে বিশেষত: অনলের বিভিন্ন বিশেষ সংখ্যায় সে অনুভূতির প্রকাশ পায় আর্চবিশপ মহোদয়ের মৃত্যুর পরে৭৭ সনে প্রকাশিত ৩য় বর্ষ বড়দিন সংখ্যা অনলে ন্তি শয়নে আর্চবিশপ গাঙ্গুলীর মরদেহের ছবির নীচে অনল সম্পাদকীয় পরিষদ খ্রীষ্টান ছাত্রকল্যাণ সংঘের পক্ষে সংখ্যাটি প্রয়াত আর্চবিশপের স্মরণে উৎসর্গ করে ক্যাপসান জুড়ে দেয়া হয়

‘‘ এবারেই তিনি প্রথম আমাদের মাঝে নেই
অথচ তিনি ছিলেন যাবৎ,
ছিলেন আমাদের একজন হিতাকাঙ্খী, বন্ধু
এবং প্রধান পৃষ্টপোষকরূপে সুদীর্ঘকাল
আমরা তাঁকে শ্রদ্ধার্হ চিত্তে স্বরণ করি
আজীবন করতেও চাই
কোন আনুষ্ঠানিকতার গদবাঁধা ছাঁচে নয়
বরং আমাদের কচি হাতের বিভিন্নতায়
আমরা তাঁর জীবিত আত্মায় বিশ্বাসী
এবং আশীর্বাদের প্রত্যাশী ’’
         
ছোট বড় সব ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে আর্চবিশপ টি,, গাঙ্গুলীর ন্তরিকতাপূর্ণ সহানুভূতিশীল সর্ম্পকের কারণেই তখনকার ছাত্র-ছাত্রীদের  মনে তিনি পেয়েছিলেন বিশেষ আসন আর তাইতো ছাত্রদের প্রাণের দাবী বাস্তবায়িত না হলেও শ্রদ্ধা জানাতে এক ফোটা কৃপণতাও প্রকাশ পায়নি তাদের মনে ছাত্র-ছাত্রীদের মনোভাব খানা রিলে রেসের বাটন স্তান্ততরের মত করেই পরবর্তীতে আসা নতুন প্রজন্মের ছাত্র-ছাত্রীদের মনে পেীছাতে পেরেছিল অগ্রজরা বছরের পর বছর ধরে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে বছরের পর বছর প্রতিটি প্রতিভার অন্বেষণের শেষদিনে আর্চবিশপ মহোদয়ের আত্মার কল্যাণে খ্রীষ্টযাগ কবরে শ্রদ্দাঞ্জলী জ্ঞাপন রীতিমত রেওয়াজ হয়ে দাড়িয়েছিল ১৯৯৪ সনে ছাত্রকল্যাণের রজত জয়ন্তী অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে আর্চবিশপ গাঙ্গুলীর কবরে জড়ো হয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলী জানাতে দেখেছিলাম এক বৃহৎ ছাত্র-জনতাকে যাদের অনেকের জস্ম হয়েছিল আর্চবিশপ মহোদয়ের মৃত্যুর পরে অনল এবং ছাত্রকল্যাণ সংঘের কর্মকর্তা সদস্য-সদস্যাদের মাঝে শ্রদ্ধের আর্চবিশপ গাঙ্গুলী খ্রীষ্টান ছাত্রাবাস সমস্যা এমন প্রভাব ফেলেছিল যে একই বড়দিন সংখ্যায় বড়দিনের শুভেচ্ছা জ্ঞাপনেও একই বিষয় চলে আসে

এবারের বড়দিন নববর্ষ
বাংলাদেশের খ্রীষ্টান ছাত্র-ছাত্রীদের
জীবনে নিয়ে আসুক
আমাদের পৃষ্টপোষক হিতাকাঙ্খী বন্ধু
আর্চবিশপ গাঙ্গুলীর স্বপ্ন ----
স্থায়ী হোষ্টেল বাস্তবায়নের
উজ্জ্বল সম্ভাবনা

তাঁর সে অসমাপ্ত কাজ
আমরা সমাপ্ত করবোই --
হোক আমাদের শুভদিনে
আপনার, আমার
সবার দৃপ্ত শপথ


প্রতিভার অন্বেষণ, ছাত্রকল্যাণ আর্চবিশপ গাঙ্গুলী :
 সামাজিক মূল্যবোধ গড়ে তোলার সামাজিক অবক্ষয় রোধের প্রাথমিক শর্ত সবাইকে সংস্কৃতিমনা করে তোলা সে সময়কার খ্রীষ্টানদের মধ্যে সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চা তেমন ছিল না একদিকে ছিল পর্যাপ্ত সুযোগের অভাব, অন্যদিকে নিজেদের মধ্যে অনুশীলন পরিশীলনের আগ্রহের অভাব এমনি এক অবস্থায় খ্রীষ্টান সমাজের বিভিন্ন  পর্যায়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের সুযোগ সৃষ্টিতে ১৯৭৫ সনে আয়োজন করা হয ১ম শিক্ষা সাংস্কৃতিক সপ্তাহ৭৫ এর সে প্রথম অনুষ্ঠানের শেষদিন পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভ্যাটিক্যানের রাষ্ট্রদুত মহামান্য আর্চবিশপ (পরবতীর্তে কার্ডিনাল) এডওয়ার্ড ক্যাসিডি বিশেষ অতিথি ছিলেন আর্চবিশপ টি..গাঙ্গুলী পুরষ্কার বিতরণী সভায় সংঘের সভাপতি নেভেল ডিঃ রোজারিও প্রতিযোগিতামূলক ধরনের কর্মসুচী মান্ডলিকগতভাবে সারা বাংলাদেশ জুড়ে গ্রহণ করার জন্যে আর্চবিশপ গাঙ্গুলীর নিকট অনুরোধ রাখেন বিশেষ অতিথি তাঁর ভাষণে বলেন,   ‘‘ এতদিন ইচেছ থাকলেও উপায় ছিল না যুব সম্প্রদায়ের সমস্যা তলিয়ে দেখার এবার থেকে একজন যাজক থাকবেন যুব সম্প্রদায়ের পরামর্শদাতা সাহায়্যকারী রূপে

পঁচাত্তুরে শুরু করা প্রতিভার অন্বেষণশত ঘাত-প্রতিঘাতের মুখেও টিকে থেকে ৪০ বছর পর ২০১৫ পালন করছে আটত্রিশতম প্রতিভার অন্বেষণ ঢাকা কেন্দ্রিক অনুষ্ঠান হলেও প্রথম বছর থেকেই বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অনেকেই প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে প্রায় প্রতিবছরই প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানটি নতুন প্রজন্মের প্রতিভা উন্মেষের ক্ষেত্রকে করেছে আরও প্রসারিত আর্চবিশপ গাঙ্গুলী বিশ্বাস করতেন যে সাধারণ মানুষের সক্ষমতা এবং মানবিক অর্জনগুলো সাংস্কৃতিক ভাবনায় যুক্ত করতে হবে আমাদের সম্প্রদায়ে প্রচলিত প্রাচীন বদ্ধমুল চিšতা-চেতনা, শিক্ষা, প্রবৃত্তি দিয়ে পরিবর্তনশীল বিশ্বকে বোঝা যে কোনোভাবেই সহজ কাজ নয় তা ঠিকই তিনি অনুভব করেছিলেন আর এটা মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন বলেই তাকে দেখেছি প্রতিভার অন্বেষণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন যুব সংগঠনগুলোকে বিভিন্ন কর্মকান্ডে উৎসাহিত করতে ছাত্র সম্প্রদায়কে তিনি শিক্ষার পাশাপাশি মুক্তমনের অধিকারী এবং সংস্কৃতিমনা  হতে উৎসাহিত করতেন সব সময়

সংস্কৃতি-মনা আর্চবিশপ গাঙ্গুলী  


সুহৃদ সংঘের জন্মের পর তাদের প্রথম নাটক মঞ্চায়নের জন্যে বেছে নেয়া কল্যাণ মিত্রেরকুয়াশা কান্নানাটকটি নাটকটি পরিচালনার  ভার দেয়া সুহৃদ সংঘের অন্যতম উপদেষ্টা মিঃ হেবল ডিঃ ক্রুজকে সহকারী পরিচালনায় ছিলেন সুহৃদ জর্জ ডিঃ রোজারিও এবং সংগীত পরিচালনায় ছিলেন সুহৃদ দীপক বোস সেন্ট গ্রেগরী হাই স্কুল কতৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে স্কুলেরই একটি ক্লাশরূমে শুরূ রিহ্যারসেল প্রতিদিন সন্ধ্যায় সামাজিকতায় বিরূপ ধারণা পরবর্তী প্রতিক্রিয়ার কারণে সে সময় মহিলা চরিত্রে অভিনয় করার জন্যে আজকালকার মত সৌখিন মহিলা অভিনেত্রী পাওয়া যেত না বললেই শুধু নয় বলতে হয় রীতিমত দু:প্রাপ্যও ছিল আবার পারিশ্রমিকের বিনিময়ে অভিনেত্রী আনার আর্থিক সঙ্গতি ছিল না সংঘের সুহৃদ সংঘের দুর্যোগে কালে সাহস করে সেদিন এগিয়ে এসেছিলেন সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার স্কুলের দুজন শিক্ষিকা মিস এগনেস এবং মিস পুষ্প গমেজ কিন্তু পাল-পুরোহিত সরাসরি জানিয়ে দিলেন মহিলা নিয়ে কোন নাটক করা যাবে না মহিলা চরিত্রে পুরূষকে মহিলার মেক আপ দিয়ে শাড়ী পড়িয়ে অভিনয় করাতে হবে ১৯৬৯ এর গোড়ার দিকে খোদ ঢাকা শহরে মহিলা চরিত্রে পুরূষকে মহিলা সাজিয়ে নাটক মঞ্চায়ণ ২০১৫ এসে অবিশ্বাস্য ঠেকলেও সেদিনকার মান্ডলিক সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলের সেটাই ছিল আসল চেহারা ------সেটাই ছিল বাস্তবতা সুহৃদ সংঘ নিছক একটা ক্লাব, সংঘ বা সমিতি বলতে যা বুঝায় আদতে তা ছিল না বরং ছিল একটি আন্দোলন আন্দোলন ছিল শেকড়ের অন্বেষণের পাশাপাশি খ্রীষ্টান সমাজে প্রচলিত প্রতিষ্ঠিত অন্যায় অবিচারের বিরূদ্ধে স্বোচ্চার প্রতিবাদী কন্ঠ এবং সমাজে বহমান বিপরীতমুখী স্রোতধারার বিরূদ্ধে অবস্থান নিয়ে তা পাল্টানোর একটি সমবেত সাহসী পদক্ষেপ তাই সুহৃদ বাহিনী এটাকে সহজভাবে মেনে না নিয়ে দ্বারস্থ হলো আর্চবিশপ গাঙ্গুলী মহোদয়ের নিকট আর্চবিশগ মহোদয় ধৈয্য সহকারে  ক্ষুব্দ এবং আবেগপ্রবণ যুবক দলের সব কথা শুনলেন এবং গ্রামের জন্যে প্রচলিত ব্যবস্থা শহরের জন্যে কোনমতেই প্রযোজ্য নয় বলে আমাদেরকে নাটকের মহড়া চালানোর পরামর্শ দিয়ে যথাস্থানে নির্দেশ পাঠিয়ে দিলেন সুচিন্তাবিদ, সংস্কৃতিবান সংস্কৃতিপ্রাণ, দুরদৃষ্টিসম্পন্ন জ্যের্তিময় মহাপুরূষের সেদিনের সে সিদ্ধান্ত মান্ডলিক সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে এক মাইলষ্টোন হিসেবে চিহ্নিত হবার দাবী রাখে।(চলবে)

No comments:

Post a Comment